সৌদি রাজপরিবারের করুণ প্রেম কাহিনী
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
সৌদি এক রাজকুমারীর প্রণয় ও ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে তার হত্যার ঘটনাকে ঘিরে তৈরি একটি প্রামাণ্য চিত্র নিয়ে ১৯৮০ সালে সৌদি আরব আর ব্রিটেনের মধ্যে সৃষ্টি হয় ব্যাপক কূটনৈতিক তিক্ততা । ঐ বছরের এপ্রিল মাসে ব্রিটেনের বেসরকারি টিভি চ্যানেল আইটিভি-তে প্রচারিত প্রামাণ্য ছবি ‘ডেথ অফ এ প্রিন্সেস’- তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার অ্যান্টনি টমাস।
১৯ বছরের এক সৌদি রাজকুমারী ও তার প্রেমিকের প্রাণদন্ডের সত্য কাহিনি ভিত্তিক এই বির্তকিত ছবিটি সম্প্রচারের পরপরই দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। ক্ষুব্ধ সৌদি সরকার ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে দেশত্যাগ করার নির্দেশ দেয় এবং হুমকির মুখে পড়ে ব্রিটেনের সঙ্গে সৌদি আরবের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাণিজ্য চুক্তি ।
সৌদি বাদশার ভাইয়ের নাতনি রাজকুমারী মিশালকে ব্যাভিচারের দায়ে জনসমক্ষে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার ঘটনাকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছিল ডেথ অফ দ্যা প্রিন্সেস ছবিতে।
১৯৭৭ সালে একজন ব্রিটিশ নির্মাণ কর্মী জেদ্দায় গোপনে ওই মৃত্যুর ছবি তুলেছিলেন। ১৯ বছরের তরুণী রাজকুমারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল আর তার প্রেমিক যুবকটির মাথা কেটে ফেলা হয়েছিল। ছবির পরিচালক অ্যান্টনি টমাস বলেন, এই কাহিনি শোনার সঙ্গে সঙ্গে গল্পটা তাকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করতে শুরু করে।
সৌদি রাজপরিবারের একজন সদস্য এক নৈশভোজের পার্টিতে ওই রাজকুমারীর অসাধারণ এক প্রেম কাহিনি শুনিয়েছিলেন অ্যান্টনিকে। তারপর ছবির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে সৌদি আরবে পাড়ি জমান অ্যান্টনি টমাস আর সত্য খুঁজতে গিয়ে গভীর আবেগ আর বিশ্বাসের এই অসাধারণ প্রেম কাহিনি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠতে শুরু করে। অ্যান্টনি বুঝতে পারেন ওই ঘটনা নিয়ে রয়েছে অনেক পরস্পরবিরোধী রিপোর্ট ।
তিনি বয়স্ক একজন সৌদি রাজকুমারী, বিজ্ঞ এক মুসলমান আইনজীবীসহ যাদের সাক্ষাৎকার নেন তাদের কথার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসে পরিবারের সম্মান বাঁচাতে রাজকুমারীকে জীবন দিতে হয়েছিল ।রাজকুমারীর পিতামহ – যিনি সৌদি বাদশার নিজের ভাই- তিনিই পরিবারের মান বাঁচাতে এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পরিচালকের বিরুদ্ধে সৌদি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল ছবিতে যা বলা হয়েছে তা পুরোপুরি মিথ্যা । অভিযোগ প্রমাণ করার মত কোনো তথ্যপ্রমাণ ছবিতে তুলে ধরা হয়নি। ছবিতে সবকিছুই অন্য লোককে দিয়ে বলানো হয়েছে- অভিনেতাদের দিয়ে অভিনয় করানো হয়েছে- সবই অতিরঞ্জিত ও সাজানো।
টমাস বলেছেন যে, তার সঙ্গে সবাই কথা বলেছিল নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে – তাদের মুখের প্রত্যেকটা কথা হুবহু এক রেখে স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছিলেন তিনি – শুধু প্রত্যেক বক্তার নাম পরিচয় বদলে দিয়েছিলেন এবং তাদের নিজেদের কণ্ঠের জায়গায় অভিনেতাদের দিয়ে সেগুলো বলিয়েছিলেন।
ব্রিটেনে ডেথ অফ অ্যা প্রিন্সেস দেখানোর একমাস পর তা দেখানো হয় আমেরিকান টেলিভিশনে। তবে ব্রিটিশ টিভিতে ছবিটি দেখানো নিয়ে তুমুল হৈচৈ-এর পর আমেরিকায় এর প্রদর্শনের পর নতুন করে আর বিতর্ক মাথা চাড়া দেয় নি। এর কয়েক মাসের মধ্যেই ব্রিটেনের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় । অ্যান্টনি টমাস আজও চলচ্চিত্রকার হিসাবে কাজ করছেন। সূত্র: বিবিসি।
আরো যা পড়তে পারেনঃ
# যেখানে আত্মহত্যা হাতছানি দেয় !
# রাজ্জাক শাবনূরের পর এবার জসিম
# বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া বিশ্বের ১০০ তারকা!
# ৬৫ বছর বয়সে একসঙ্গে ৪ সন্তান
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল